কক্সবাজারে মেগা প্রকল্প ঘিরে ইয়াবা সিন্ডিকেট

সৈয়দুল কাদের •

মহেশখালীর বিভিন্ন মেগা প্রকল্প ঘিরে গড়ে উঠেছে একাধিক ইয়াবা সিন্ডিকেট। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রমিক ও কর্মচারীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে লাখ-লাখ টাকার ইয়াবা। শ্রমিকদের মাঝে ইয়াবার চাহিদা বেশী হওয়ায় চাহিদা মেটাতে প্রতিযোগীতায় নেমেছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সম্প্রতি একটি সিন্ডিকেটের সদস্যদের পুলিশ গ্রেফতার করলেও ইতোমধ্যে তারা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। ফলে এলাকার সামাজিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

খুচরা ইয়াবা বিক্রির প্রতিযোগিতা চলছে মহেশখালীর সবকটি মেগা প্রকল্পে। কয়লা বিদ্যুৎ, গভীর সমুদ্র বন্দর, এসপিএম প্রকল্প ও গ্যাস লাইন প্রকল্পে দেশী ও বিদেশী অন্তত ২০ হাজার লোক কাজ করছে। তাদেরকে ঘিরেই জমজমাট হয়ে উঠেছে ইয়াবা ব্যবসা।

এতে কর্মকর্তা থেকে শ্রমিক পর্যায়ে অনেকেই ইয়াবা সেবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে একটি কোম্পানীর মানব সম্পদ বিভাগের মামুন নামের এক কর্মকর্তাকে ইয়াবাসহ আটক করেছিল পুলিশ। এই সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ৫ জনের নামে থানায় মামলাও হয়।

মাতারবাড়ি রাজঘাটের নবীর হোসেন ভুট্টু জানিয়েছেন, সম্প্রতি একাধিক রুট দিয়ে ইয়াবা যাচ্ছে প্রকল্প এলাকায়। এছাড়া শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে প্রকল্পের বাইরে যারা বাসা নিয়ে থাকেন তাদের অনেকের বাসায় চলে ইয়াবা সেবন। তাদের ইয়াবা সরবরাহ করতে মাতারবাড়িতে গড়ে উঠেছে অন্তত ৪টি সিন্ডিকেট। তারা প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকার ইয়াবা সরবরাহ করছে প্রকল্প এলাকায়। যার ফলে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় যুব সমাজও ইয়াবা সেবনে জাড়িয়ে পড়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে মাতারবাড়িতে কোন অভিযান না থাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে ইয়াবা সেবন। এতে প্রকল্পের কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে।

কালারমারছড়ার ঝাপুয়া গ্রামের মোঃ জাকারিয়া জানিয়েছেন, বিদেশী এবং বহিরাগত শ্রমিকের কারণে এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ইয়াবা। কোন বাধা ছাড়াই চলছে ইয়াবা ব্যবসা ও সেবন। এতে অধিক লাভের আশায় অনেকেই ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কালারমারছড়ায় অন্তত ২টি ইয়াবা সিন্ডিকেট কাজ করছে ইয়াবা সরবরাহে।

মাতারবাড়ির ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, প্রকল্প এলাকা ঘিরে ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে উঠার বিষয়টি অনেক আগের। বিগত সময়ে প্রশাসন কয়েক দফা ব্যবস্থা নিলেও কোন কাজ হয়নি। এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যবসায়ি ও সেবনকারীরা। যারা প্রকল্প এলাকায় কাজ করে তারা মাদক সেবন করছে কিনা নিয়মিত পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

প্রকল্প এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন কোম্পানী তাদের শ্রমিক কর্মচারীদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিলে মাদক সেবন অনেকাংশে কমে যেত। তা না হওয়ায় তারা অনেকটা বেপরোয়া। অভিন্ন কথা বলেছেন স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক নুর বক্স। তিনি বলেন বহিরাগতদের কারণে এলাকার সুন্দর পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। কারা ইয়াবা সরবরাহে জড়িত তাদের সকলেই চিনে। প্রশাসনের কাছেও তারা চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।

ধলঘাটার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাহমত আলী জানিয়েছেন, ধলঘাটা হয়েই মাতারবাড়িতে প্রবেশ করছে ইয়াবা। সড়ক দিয়ে আসা ঝকিপুর্ণ হওয়ায় ধলঘাটার বিভিন্ন ঘাটেই খালাস হচ্ছে ইয়াবা। নিয়মিত স্পীডবোট চলাচল থাকায় কেউ বুঝতেও পারে না ইয়াবার চালানের বিষয়টি। প্রকল্পে ব্যবহৃত স্পীডবোট দিয়েও ইয়াবা নিয়ে আসে সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের একজন সিনিয়র প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মেগা প্রকল্পে বিভিন্ন কোম্পানীর অসংখ্য লোকজন কাজ করে। এরা কি করছে তা এরাই তদারক করে। ইয়াবা সেবনের বিষয়টি শুনে বিগত সময়ে কয়েকবার প্রশাসনকে অবহিত করা হলে তারা ব্যবস্থাও নিয়েছে। এখন আবার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবদুল হাই জানিয়েছেন, কোন তথ্য পেলে পুলিশকে জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাদক প্রতিরোধে পুলিশের অবস্থান আরো কঠোর হবে। তিনি জানান, কোন মাদক ব্যবসায়ি কিংবা সেবনকারীকে কোন অবস্থাতেই রেহাই দেয়া হবে না।